Revolutionary democratic transformation towards socialism

‘গণতন্ত্র, ব্যবস্থা বদল ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার সংগ্রাম এগিয়ে নিন’


২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত মহাসমাবেশে বোমা হামলায় শহীদ হিমাংশ, মজিদ, হাশেম, মোক্তার, বিপ্রদাস স্মরণে আয়োজিত শ্রদ্ধা নিবেদন ও সমাবেশে নেতৃবৃন্দ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন- হত্যা, হামলা, মামলা করে  বামপন্থীদের নীতিনিষ্ঠ অবস্থান থেকে বিচ্যুত করা যাবে না।

আজ ২০ জানুয়ারি ২০২৫, সকাল ৯টা থেকে ১০টা পল্টনস্থ সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনের সামনে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে সিপিবিসহ বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এ সময় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সম্পাদক শ্রমিকনেতা কাজী রুহুল আমিন।

সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এদেশে দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক ধারার বিপরীতে গণমানুষের স্বার্থ রক্ষায় নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলায় পদে পদে বাধা আসছে। এখনও এই অপচেষ্টা চলছে। ২০০১ সালে ২০ জানুয়ারি এভাবে সিপিবি’র ডাকে লাখো মানুষের সমাবেশে বোমা হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। লাল পতাকার হাজার হাজার মানুষের উত্থান ঠেকাতে সাম্প্রদায়িক, অগণতান্ত্রিক, লুটেরা শাসকগোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে। আজও এর সাথে জড়িতদের ও নেপথ্যের হোতাদের গ্রেফতার ও বিচার শুরু করা হয়নি। 

তিনি ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার সংগ্রাম অগ্রসর করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু

এই সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কারণ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার জন-জীবনের সংকট দূর করতে পারছে না। আগের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বহাল রেখেই আরো ভ্যাট-ট্যাক্স চাপিয়ে দিয়ে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। 

তিনি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানান। তিনি সংবিধানের চার মূলনীতি অক্ষুন্ন রেখে এর অসম্পূর্ণতা দূর করতে হবে বলে উল্লেখ করে বলেন, অহেতুক কথাবার্তা বলে নির্বাচনী সংস্কার ও নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ করা যাবে না।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ২০০১ সালে সারা দেশ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ঢাকায় সমবেত হয়েছিল তাদের কথা তুলে ধরার জন্য। বোমা হামলা চালিয়ে তাদের কন্ঠকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ঘটনার পরপর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতেও বোমা বিস্ফোরণের খবর বেরিয়েছিল। ওই সময় পত্রপত্রিকায় হত্যাকারীদের নিয়ে নানা খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সরকার এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নানা ধরনের কথাবার্তা সামনে আনার চেষ্টা করে। এই হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিচার না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে হত্যাকারীদের চিহ্নিত, গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। 

জনজীবনের সংকট দূর করতে মনোযোগ দেওয়ার জন্য তিনি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, সব কাজ করার দায়িত্ব এই সরকারের নয়। বরং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। 

তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি এই সরকারের অনেকেই ছবি নামাতে, বিশেষ ঘোষণায় তৈরিতে যত ব্যস্ত- জনজীবনের সংকট সমাধানে তারা ততটা ব্যস্ত

নয়। তিনি বলেন, স্বৈরাচারী ব্যবস্থা পতনের লড়াই আমরা দীর্ঘদিন ধরে করছিলাম। এই লড়াইয়ে বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। তিনি দেশের অপরাপর বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনজীবনের সংকট মোকাবেলায় এবং গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নে সংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।

মিহির ঘোষ তার বক্তব্যে বর্তমান সময়ে সারা দেশে জান-মালের নিরাপত্তা না দিতে পারায় সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, জনজীবনের সংকট দূর করতে না পারলে সরকারের প্রতি জনগণের যে আস্থা ছিল তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। 

তিনি বলেন, হামলা মামলা চালিয়ে অতীতে শাসকগোষ্ঠী কমিউনিস্টদেরকে তাদের পথ থেকে বিচ্যুত করার অপচেষ্টা করেছিল। কিন্তু অতীতের শাসকগোষ্ঠী সফল হয়নি। আগামীতেও কেউ বা কোন গোষ্ঠী যদি সেই অপচেষ্টা চালায় তবে তারাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কমিউনিস্ট পার্টি জিন্দা থাকবে এবং তার দায়িত্ব পালন করে যাবে।

২০ জানুয়ারি শহীদদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, ফ্যাসীবাদ বিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউয়ন কেন্দ্র (টিইউসি), উদীচী, বাংলাদেশের কৃষক সমিতি, বাংলাদেশের ক্ষেতমজুর সমিতি, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, সাপ্তাহিক একতা, হর্কাস ইউনিয়ন, গৃহকর্মী শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভন্ন সংগঠন পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। 

আর্ন্তজাতিক সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে ২০ জানুয়ারি শহীদদের স্মরণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..