সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ
অস্থায়ী কার্যালয় : ২ কমরেড মণি সিংহ সড়ক, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
যোগাযোগ : ০১৭১১৪৮৯৮৩২, ০১৭১১২৩৬৬৮৩।
মা মাটি মোহনা বিদেশিদের দেব না
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়া চলবে না
রাখাইন করিডোর দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধ কর
জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়
২৭ ও ২৮ জুন, ২০২৫, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ
সংবাদ সম্মেলন
২১ জুন ২০২৫ ॥ বিকেল ৩ টা ৩০ মি ॥ মৈত্রী মিলনায়তন ॥ মুক্তি ভবন, ঢাকা ১০০০
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানবেন।
২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশে গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের কাজ দৃশ্যমান করা, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুততম সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অগ্রসর হবে- এটি ছিল সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।
কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ওই পথে না হেঁটে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে রাখাইনে করিডোর ও লাভজনক চট্টগ্রামের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এর ফলে গণতন্ত্রে উত্তরণের সম্ভাবনায় নানা সংকট তৈরি হচ্ছে ও নানা দেশি-বিদেশি অপশক্তি ঐ সম্ভাবনাকে বেহাত করার প্রচেষ্টা নিচ্ছে।
সংগ্রামী বন্ধুগণ
আমরা সবাই জানি যে চট্টগ্রাম বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি, দেশের হৃদপিণ্ড। আমদানি ও রপ্তানির ৯২ ভাগ এই বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। শুধু তাই নয় ভৌগোলিক কারণে এই বন্দরের সাথে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জড়িত। চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বৃহৎ ও লাভজনক টার্মিনাল হলো নিউমুরিং টার্মিনাল। আর এই টার্মিনালকে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিল স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। তার ধারাবাহিকতায় দেশ ও জনগণকে না জানিয়ে গোপনে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্র ছাড়াই দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড কোম্পানিকে চট্টগ্রামের নিউমুরিং টার্মিনালের দায়িত্ব দিতে সরকার এখন মরিয়া।
সরকারের এই এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বন্দরকে আরো লাভজনক করতে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া হবে আত্মঘাতী। কারণ এর ফলে বন্দরের মত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদের উপর বিদেশি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। বিদেশিদের নিয়োগের ফলে দেশিয় কর্মসংস্থান কমবে। শ্রমিকরা বেকার হবে।
বন্দরে মাফিয়াচক্র তৈরি হয়েছে। এরাই বন্দরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা বন্দরের মাফিয়াতন্ত্র উচ্ছেদ করে দক্ষ ও দুর্নীতি মুক্ত অবস্থা নিশ্চিত করা এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আহবান জানাই। দেশি-বিদেশি বেসরকারি কোম্পানিকে ইজারা না দিয়ে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই বন্দর পরিচালনা করাই যথাযথ। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা বলে এ ধরনের বেসরকারিকরণ ব্যয়বৃদ্ধিসহ আর্থিক ঝুঁকি ও দায় বৃদ্ধি করবে। আর শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকেই এর খেসারত দিতে হবে। সর্বোপরি এই ডিপি ওয়ার্ল্ড কোম্পানির সঙ্গে মার্কিন নৌ-বাহিনীর চুক্তি ও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যা ওই কোম্পানির ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে। তাই দেশীয় ব্যবস্থাপনায় সফল ও লাভজনকভাবে পরিচালিত টার্মিনাল আমরা বিদেশিদের হাতে তুলে দিব কেন? অতীতে আওয়ামী লীগসহ সকল সরকারের আমলে এ ধরনের অপচেষ্টা জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করেছে। এবারেও দেশপ্রেমিক জনগণ এই অপতৎপরতা রুখবে।
সাংবাদিক বন্ধুগণ
বর্তমান সরকার মিয়ানমারের রাখাইনে কথিত মানবিক করিডোর বা ত্রাণ চ্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই করিডোর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু মানবিক করিডোরের কথা বলা হলেও তা মার্কিনের ‘চীন ঘেরাও’ নীতির স্বার্থে যে ব্যবহৃত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিকভাবে আক্রান্ত হবে। বাংলাদেশকে মায়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য করবে। ভারত-চীন-পাকিস্তানসহ নানা শক্তির দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও ছায়াযুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে রাখাইন করিডোর মারফত বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পাবে। বিষয়টি জানাজানি হলে সরকার এই ব্যাপারে নানা সময় স্ববিরোধী কথাবার্তা বলে এক্ষেত্রে আরও ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়েও সরকারের পদক্ষেপ সন্দেহজনক। বাংলাদেশের জনগণ যেকোন মূল্যে এই ধরনের দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপচেষ্টা রুখে দাঁড়াবে।
সরকার মার্কিন স্যাটেলাইট কোম্পানি স্টারলিংককে এদেশে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের অনুমতি দিয়েছে এবং ইতোমধ্যে তা চালু হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি। কারণ এই মার্কিন কোম্পানি শুধু নিরীহ ইন্টারনেট সেবাই প্রদান করে না, সেই সাথে দেশে দেশে সামরিক ও রাজনৈতিক নজরদারি চালায়। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে, ফিলিস্তিন-ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা-ইসরাইলের পক্ষে তথ্য প্রযুক্তিগত অস্ত্র হিসাবে কাজ করেছে এই ইন্টারনেট কোম্পানি। সুতরাং এই ইন্টারনেট কোম্পানি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে । সেজন্য স্টারলিংকের সাথে চুক্তি বাতিল করার দাবি করছি।
সামরিক শিল্পের মত স্পর্শকাতর খাতে তুরস্ক ও কাতারকে অস্ত্র তৈরির কারখানা নির্মাণের আহ্বান করেছে এই সরকার। যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী ও বিশ্বশান্তির পক্ষে বংলাদেশের জন্য এটা সামরিক ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে। তাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার দাবি জানাচ্ছি। কারণ আমরা প্রাণহানি নয়, প্রাণ বাঁচানোর বিনিয়োগ চাই। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই, ধ্বংস নয় সৃষ্টি চাই। সামগ্রিক বিবেচনায় তা আমরা মনে করি দেশের সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশবিরোধী সকল পদক্ষেপ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
এসব দাবি আদায়ে আমরা আগামী ২৭ ও ২৮ জুন ২০২৫ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রোড মার্চ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।
আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে আহ্বান জানাই, আসুন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ সফল করি ও আওয়াজ তুলি:
১। নিউমুরিং টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া চলবে না। বন্দরের মাফিয়াতন্ত্র উচ্ছেদ করে, দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত অবস্থা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কর। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বন্দর পরিচালনা করতে হবে।
২। রাখাইনে করিডোর দেওয়ার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
৩। স্টারলিংক, সমরাস্ত্র কারখানা, করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে।
৪। মার্কিন-ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী দেশসমূহের সাথে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারসহ বিগত সকল সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি প্রকাশ করতে হবে। জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে।
কর্মসূচি:
* ২৭ ও ২৮ জুন, ২০২৫ ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ। এই কর্মসূচীর সাথে সংহতি জানিয়ে ২৭, ২৮ জুন দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।
* ২৭ জুন : ঢাকায় রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, সকাল ৯টায়।
রোডমার্চের রুট:
* নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লার বিভিন্ন পয়েন্টে পথসভা/মিছিল শেষে কুমিল্লায় প্রথম দিনের সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
*ফেনীতে রাত্রিযাপন।
* ২৮ জুন সকালে ফেনী থেকে যাত্রা শুরু করে মিরসরাই, সীতাকুন্ডে পথসভা/মিছিল শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
আমরা প্রত্যাশা করি, দেশের স্বার্থে আপনারা রোডমার্চের বক্তব্য ও পরিকল্পনা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
ধন্যবাদসহ
রুহিন হোসেন প্রিন্স
০১৭১১৪৮৯৮৩২