বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)'র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ-এর ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ ৯ অক্টোবর ২০২৪ সিপিবি আয়োজিত আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, একটি বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার সংগ্রামে কমরেড ফরহাদ তাঁর গোটা জীবন ব্যয় করেছেন। আকণ্ঠ বিপ্লব পিয়াসী কমরেড ফরহাদ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি আমলের স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম, মহান ভাষা আন্দোলন, ৫৮ সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি এবং তার প্রিয় পার্টি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অবদান সেই বৈষম্যমুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছে।
নিষিদ্ধ থাকা কমিউনিস্ট পার্টিকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে তুলে ধরতে পার্টি সিদ্ধান্তকে শিরোধার্য করে তিনি নিরলস কাজ করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয়ী বাংলাদেশে আমৃত্যু তিনি, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ তথা সমাজতন্ত্রের সংগ্রামকে অগ্রসর করে নিয়ে গেছেন।
কমিউনিস্ট পার্টি ও তার কর্মকাণ্ড এদেশের তরুণ প্রজন্মসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে। দেশের বিভিন্ন সংকটে স্বৈরাচারবিরোধী গণতন্ত্রের সংগ্রামে, তার অবদান জাতি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে। এ বছর আমরা এমন একটি পরিবেশে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলিত হয়েছি যে, অসংখ্য মানুষের রক্তদানের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত করতে
হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থানে সাধারণ মানুষের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা হলো, সব মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ, সবার কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা, সব কালাকানুন বাতিল ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।
এই আন্দোলনের শক্তি ভারসাম্যের কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি অনেক কিছুতে ভর করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই সংগ্রামের অন্যতম লক্ষ্য হলো এক স্বৈরাচারীর বদলে আরেক স্বৈরাচার যেন প্রতিষ্ঠা না হয়। আমাদের পার্টি দীর্ঘদিন ধরে যে সংগ্রাম করছে তার অন্যতম স্লোগান হলো, দুঃশাসন হটাও-ব্যবস্থা বদলাও এবং এজন্যে নীতিনিষ্ট বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলো। এই গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের উপরে দাঁড়িয়ে এই সংগ্রাম অগ্রসর করে দেশকে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামকে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর বিভিন্ন সময় যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বরং মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করা হয়েছে স্বৈরাচারী ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে। আবার অনেকে সুযোগ বুঝে মুক্তিযুদ্ধকে পরিত্যাগ করতে নতুন নতুন বক্তব্য হাজির করছে। এই অবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে নীতিনিষ্ট পার্টি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এটা মনে রাখা দরকার যে, দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বের বিভিন্ন অপশক্তি সবসময় তাদের স্বার্থ পূরণ
করতে চাইবে। এসব বিষয় সতর্ক থেকে সচেতনভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
নেতৃবৃন্দ নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথাযথ অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এসব বিষয়ে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। জনজীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনা ছাড়া সংস্কারের কার্যক্রম এখনো যাবে না। নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে চলমান সংস্কার কার্যক্রম ও নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের কাজ এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানান।
বিকেল সাড়ে চারটায় সিপিবি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মৈত্রী মিলনায়তনে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, মিহির ঘোষ, মাহবুবুর আলম, সাজ্জাদ জহির চন্দন, ডা. সাজেদুল হক রুবেল, হাসান তারিক চৌধুরী, বিমল মজুমদার, মোতালেব হোসেন, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, ছাত্রনেতা মাহির শাহরিয়ার রেজা।
এর আগে আজ সকালে ঢাকায় বনানী কবরস্থানে প্রয়াত মোহাম্মদ ফরহাদ এর কবরস্থানে সিপিবিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এসময় সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া মোহাম্মদ ফরহাদ এর জন্মস্থান পঞ্চগড়ের বোদাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় স্মরণ সভা, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।