Revolutionary democratic transformation towards socialism

আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২৩-২০২৪ কে সামনে রেখে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সংবাদ সম্মেলন

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
শুভেচ্ছা জানবেন।

আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।

চ্যালেঞ্জের মুখে বাজেট : ২০২৩-২৪

এবারের বাজেট সরকারকে অনেকগুলি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে উন্নয়নের ফানুস এবার ফেঁসে যেতে পারে। ২০২৩-২৪ হবে ব্যতিক্রমী অর্থনৈতিক সংকটের বছর। সরকারের ও বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলি নিম্নরূপ-

১। নিম্ন প্রবৃদ্ধি : গত ১১ বছরের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার কখনো ৬.৩০ শতাংশ নেমে আসে নি। এবার তা এসেছে, তাও আবার সরকারি সংস্থা বিবিএস তথ্য দিয়েই তা দেখা যাচ্ছে।
২। সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি : গত ১০ বছরে এবারই প্রথম মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ৮.৬ শতাংশ পৌঁছেছে।
৩। সর্বনিম্ন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ : গত ৭ বছরে বিদেশি রিজার্ভের পরিমাণ সর্বনিম্ন ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
৪। শহরাঞ্চলে সর্বোচ্চ আয় বৈষম্য : স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে একটি সূচক ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে তা হচ্ছে আয় বৈষম্য সূচক। এটি যেই গিনি সহগ (দারিদ্র পরিমাপের একটি অর্থনৈতিক সূচক) দিয়ে মাপা হয় তা .৫০ স্তরে পৌছালে এটাকে বলা হয় বিপজ্জনক। যেসব মধ্য আয়ের দেশ এই মাত্রার গিনি সহগে পৌঁছায় তাদের পক্ষে আর মধ্য আয় থেকে মুক্ত হয়ে  উচ্চ আয়ে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। সে জন্য একে বলা হয় মাঝারি আয়ের ফাঁদ। বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ  হতে চায়  কিন্তু এখনই তা .৪৯ গিনি সহগে পৌঁছে গেছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেনের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে শহরাঞ্চলে এই সূচক হচ্ছে .৫৫ অর্থ্যাৎ বৈষম্য এখন সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের ভাষায় “কেউ থাকেন গাছতলায় আর কেউ থাকেন আকাশচুম্বি অট্টালিকায়।” এই হাল শুধু আয়ের ক্ষেত্রে সত্য নয়। একই সঙ্গে সত্য শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যের সুযোগের ক্ষেত্রে, পুঁজির সুযোগের ক্ষেত্রে, সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এমনকি ক্ষমতা, সম্মান, মর্যাদা- সকল ক্ষেত্রেই এটা প্রকটভাবে দৃশ্যমান।
৫। গণতন্ত্রহীনতা ও কর্তৃত্বপরায়ণতা : এই বাজেটেরই কয়েক মাস পর অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। তাতে “আমার ভোট আমি দিব যাকে খুশি তাকে দিব”- তা বাস্তবায়িত হবে কিনা তা এখনো প্রবলভাবে অনিশ্চিত। আর তা না হলে অস্থিতিশীলতার এক সংকট দেখা দিবে।
৬। বৈদেশিক চাপ : সম্প্রতি ভিসা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সরকারের উপর প্রবল চাপ দিয়েছে আমেরিকান সরকার। পাশাপাশি রয়েছে আইএমএফের ঋণ-শর্তাবলীর প্রবল চাপ। এ ধরনের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করতে হলে প্রয়োজন মৌলিক অর্থনৈতিক সংস্কার। অবশ্য সেগুলি ধনীক শ্রেণি, অসৎ আমলা এবং অসৎ ব্যবসায়ীরা বিরোধিতা করবে। জনগণকে আস্থায় নিয়ে তাদের কাছে স্বচ্ছভাবে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারলে সরকারও এসব মৌলিক সংস্কারের ধারে কাছে পৌঁছাতে পারবেন না। এই বাজেট কাল/পরশু যখনই ঘোষিত হোক না কেন তখনই এই সংকট ও স্ব-বিরোধিতাটি আরো সৃষ্টি হবে। সরকারের ধনীক অভিমুখী, শহর অভিমুখী, বিদেশি গোষ্ঠি অভিমুখী প্রবণতাসমূহ না বদলালে এসব সমস্যার আদৌ কোনো সমাধান সম্ভব নয়।

ধনী অভিমুখী প্রবণতাসমূহ
সরকারের রাজস্ব আয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির তুলনায় কম। জিডিপি’র মাত্র ৯ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার এই গড় হার আরো অনেক বেশি। ফলে সরকার আয় করে কম, ব্যয়ও করছেন কম। অথবা কখনো ধার করে ব্যয় করছেন বেশি। আয় করেন প্রধানত গরীবদের কাছ থেকে বেশি। আর ব্যয় করেন ধনীদের কল্যাণ বা সার্ভিসের জন্য বেশি। রাজস্ব আয় কম- কারণ ১ শতাংশ সুপার ধনীদের কাছ থেকে সরকার যথাযথ মাত্রায় কর আদায়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এ জন্য প্রত্যক্ষ কর বাড়িয়ে রাঘব বোয়ালদের করের জালের মধ্যে আনতে হবে। আবার দেখা যাচ্ছে যাবতীয় সরকারি ব্যয়ের বৃহৎ অংশই চলে যায় শ্বেতহস্তী আমলাতন্ত্র, আইন প্রয়োগকারী ও দেশরক্ষক সেনাবাহিনীর জন্য।

শহর অভিমুখী প্রবণতা
কৃষিতে কিছু  উন্নতি বর্তমান সরকারের আমলে আমরা দেখেছি। কিন্তু এই উন্নতির ফল মেহনতি কৃষক-ক্ষেতমজুর পান না। গ্রাম থেকে যে পণ্য শহরে আসে তার যথাযথ দাম উৎপাদক কৃষক পান না। উৎপাদক কৃষক ও ভোক্তাগণ উভয়ে বঞ্চিত হচ্ছে। শহরের যেই পণ্য ভোক্তা কৃষক ক্রয় করেন তারা তার জন্য অনেক টাকা দাম দিতে বাধ্য হন। বর্তমানে কৃষক তার যৌথ বনভূমি, জলাভূমি এবং এমনকি নিজস্ব আবাদী জমিও বিভিন্নপ্রকার পরিবেশ দস্যু, ভূমি দস্যু ও নদী খেকোদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছেন না। একমাত্র করোনার সময় শহর থেকে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা এবং কিছু উচ্চবিত্তও গ্রামে ফিরেছিলেন। এখন কিন্তু তারা শহরে ফিরে এসে যথাযথ মাত্রায় কাজ এবং আয় করতে পারছেন না। শহরে জিনিসের এত দাম বেড়ে গেছে যে এটা কেনার ক্ষমতা শহুরে মধ্যবিত্তের থাকছে না। ফলে নতুন গরীব বা New Poor এর সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রামের দরিদ্ররাও কোন মতে ধনীর জমি বর্গা নিয়ে বা অকৃষি খাতে মজুরি শ্রমিক হিসাবে কাজ করে বা মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। এই শ্রমজীবী গ্রামীণ গোষ্ঠি কম খেয়ে, বেশি কাজ করে ও ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বেঁচে আছেন। বাজেটে তাদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার যে বরাদ্দ আছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। যে ক্ষুদ্রঋণ বহুদিন ধরে চলছে তাতে মাত্র ১০ শতাংশের পক্ষে দারিদ্রমুক্ত হওয়া সম্ভব হয়েছে। ৯০ শতাংশ ঋণগ্রস্ত তিমিরে নিমগ্ন হয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ঋণ ও সামাজিক অধিকার যথাযথভাবে বাড়ানোর জন্য রাজস্ব উদ্বৃত্ত সরকারের নেই। যদিও কিছু ছিটে-ফোঁটা বরাদ্দ পাইপে ঢালা হয়, ছিদ্রপথে তথাকথিত সিস্টেম লস হিসাবে তার বড় অংশই বেরিয়ে যায়। নীচের তলায় তৃণমূলে দরিদ্রদের হাতে পৌঁছায় না।

মেগা প্রজেক্টের অপচয় ও বৈদেশিক নির্ভরতা
সরকার বড় বড় প্রজেক্টে হাজার হাজার কোটি টাকা ঢালছেন। বিশেষ করে এনার্জি খাতে এবং অবকাঠামো খাতে এই ব্যয় বিশালাকার ধারণ করেছে। এই খাতে ধনী উদ্যোক্তাদের সরকার প্রচুর বেআইনী সুবিধাও দিচ্ছেন- সেজন্য  দায়মুক্তি আইনের সুরক্ষাও তাদের জন্য আছে। এসব প্রকল্প ব্যয়ের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন। সরকার তা ঋণ হিসাবে বাইরে থেকে আনতে বাধ্য হচ্ছেন। তারপরেও এখানে দুর্নীতি হচ্ছে, এক বছরের কাজ তিন বছরে হচ্ছে, এবং এক টাকার কাজ তিন টাকায় হচ্ছে। ফলে “ঋণ করে ঘি খাওয়ার” মত ঘটনা ঘটছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। যখন ঋণ শোধের পালা আসবে অথবা আইএমএফের শর্তগুলির চাপ এসে ঘাড়ের উপর পড়বে (যেমন- বাজেট ঘাটতি কমানোর জন্য প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়ানো, মোট ভর্তুকি কমিয়ে আনা, সুদের ক্ষেত্রে ঋণ সুদের হার (Lending rate) বাড়ানো আর সঞ্চয় সুদের হার (Deposit rate) কমানো এবং নমনীয় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার এবং নিয়মিত সুদ সহ আসলের কিস্তি শোধের চাপ ইত্যাদি) তখন তা সরকার সামলাবেন কি ভাবে? পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে সরকার যেভাবে জাতীয়তাবাদী প্রেরণায় তা সমাধানে এগিয়ে এসেছিলেন, বর্তমানে তা করার সাধ্য তার কমে এসেছে। তা যদিও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে এবার “আমেরিকা তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না” (বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকার)। কিন্তু আমেরিকাকে মোকাবেলা করার জন্য যেসব দেশপ্রেমিক সংস্কারের প্রয়োজন তা তিনি এখনো নিচ্ছেন না যেমন : জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তি শক্তিশালী করা, টাকা পাচার ও কালো টাকা উদ্ধার করে বাজেটকে স্বনির্ভর করা, হুণ্ডি ও রেমিট্যান্সে যে নয়-ছয় চলছে তা সংশোধন করে ডলারের রিজার্ভ বাড়ানো, প্রয়োজনে অন্য অর্থনৈতিক দেশগুলির সঙ্গে চুক্তি করে অন্য কারেন্সি নিয়ে বাণিজ্য বিনিময় চুক্তি করা, ঋণ খেলাপীদের ক্ষমা না করে শাস্তি দেয়া, আমলাতন্ত্র ভেঙে দিয়ে তৃণমূলে বিকেন্দ্রীভূত গণতন্ত্র চালু করা এবং সর্বপরি গরীব অভিমুখী ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈষম্য কমানোর জন্য সচেষ্ট হওয়া ও শ্রমজীবী জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিকে অগ্রসর হওয়া। অথচ বর্তমান সরকারের পক্ষে এটা সম্ভব নয়।

এগুলি করার জন্য তথা ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য নতুন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি সমাবেশ ও রাষ্ট্রক্ষমতার প্রয়োজন হবে। এইসব জরুরি সংস্কার কতটুকু আগামী বাজেটে নেওয়া হলো, অন্তত ঘোষণা হিসাবে হলেও নেওয়া হলো এবং তার কতটুকু বাস্তবায়নের ক্ষমতা বাজেট বাস্তবায়ন এজেন্সিগুলির আছে তা ১লা জুন বাজেট ঘোষণার পর নিশ্চয়ই ধীরে ধীরে সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

আমাদের এই সাংবাদিক সম্মেলনের লক্ষ্য এটা নয় যে বর্তমান বাজেটেই আমরা এগুলি পেতে চাই বা পাওয়ার প্রত্যাশা করি। বাজেটের খসড়া ইতোমধ্যে মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদিত হয়ে গেছে। ঐ অনুমোদিত দলিলটিই প্রকাশিত হবে মাত্র। তখন তাকে ঘিরে ধনীরা চাইবে সংশোধন করে আরো দক্ষিণপন্থী একটি বাজেট তৈরি করতে এবং শোষিত বিত্তহীন-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তরা চাইবেন - যাতে বিপদ আরো না বাড়ে আর তাদের ঘোষিত অধিকার ও সুযোগগুলি থেকে যাতে সরকার পিছু হটতে না পারেন। এছাড়া বিদেশিরা (চীন, ভারত, আমেরিকা ও জাপান) নতুন ভূ-রাজনৈতিক খেলোয়াড় হিসাবে এখানে নিজ নিজ স্বার্থে বাজেটকে ঘিরে যে লবি অব্যাহত রাখবেন তা যেন সরকারকে আত্মসমর্পণের দিকে নিয়ে না যায়। তাই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে আমরা জনগণকে জাতীয় ও শ্রেণি স্বার্থ সচেতন হয়ে আগামী দিনে শ্রেণি ও জাতীয় ন্যায্য অধিকারগুলি আদায়ের জন্য এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছি।

আশু দাবিসমূহ
১। আইএমএফের ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণবিরোধী শর্তগুলি ও চাপের কাছে নতি স্বীকার করা চলবে না। দুর্নীতি-বৈষম্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক সমাজ গড়া ও সুশাসনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
২। বৈষম্য হ্রাসের জন্য প্রগতিশীল প্রত্যক্ষ করনীতি ও প্রগতিশীল ভ্যাট নীতি চালু করতে হবে।
৩। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী ও বাস্তবায়ন ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সেগুলি দুর্নীতিহীনভাবে বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। সর্বস্তরে জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা তথা সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৫। দরিদ্র জনগণের জন্য সারা দেশে ন্যূনতম খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দরিদ্র জনসাধারণের জন্য রেশন ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করতে হবে।
৬। প্রতি দুই বর্গকিলোমিটারে একটি প্রাইমারি ও একটি সেকেণ্ডারি মানসম্পন্ন সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করত হবে। অর্থের অভাবে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে। বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে হবে।
৭। স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। ডাক্তারের সার্ভিস, নার্সের সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে।
৮। কৃষকের জন্য ন্যায্য মূল্যে উপকরণ প্রদান ও ন্যায্য মূল্যে ফসল ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। ক্ষুদ্র শিল্প ও কর্মসংস্থান খাত তৈরির বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
১০। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
১১। আমদানি নির্ভরতা ক্রমশঃ কমিয়ে আনার জন্য দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটাতে।
১২। পাচারের টাকা, খেলাপী ঋণ উদ্ধারের বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে।
১৩। বৃহৎ প্রকল্প সম্পর্কে মূল্যায়ন করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
১৪। সর্বত্র স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

এছাড়া কতকগুলি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি নিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ক। জলদস্যু-ভূমিদস্যু-বনদস্যুদের শাস্তি বিধান, খেলাপীদের শাস্তি দান, টাকা পাচারকারীদের শাস্তি দান, ঘুষ-দুর্নীতির উৎপাটন করতে হবে।
খ। প্রশাসন, অর্থ ও শক্তি ব্যয় করে ভোটাধিকার বাতিল করা চলবে না।
গ। বাজার সিণ্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সমবায়ী উৎপাদক-ভোক্তা বাজার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

প্রিয় বন্ধুগণ,
যে দর্শনের উপর ভিত্তি করে বাজেট প্রণীত হচ্ছে তা সামগ্রিকভাবে জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে না। মুক্তিযুদ্ধের অর্থনীতির ধারায় বাজেট প্রণয়নের দাবি দীর্ঘদিনের। সে দাবি আজো উপেক্ষিত। তারপরও আমরা আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে কিছু কথা তুলে ধরলাম। আশা করি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী এসব কথা জানতে পারবেন।

সর্বশেষ আমরা বলতে চাই, সবকিছুর শেষ কথা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চেতনা, সংগঠন ও নেতৃত্বের অঙ্গীকারের মাত্রা। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি বাজেটকে কেন্দ্র করে উল্লেখিত দাবি আদায়ে যাবতীয় আন্দোলনে আমরা জনগণের পাশে সহায়ক সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকব।

এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমাদের বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদের আরেকবার ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
কেন্দ্রীয় কমিটি

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, এ এন রাশেদা। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ ডা. ফজলুর রহমান, সদস্য অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, লুনা নূর।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..