Revolutionary democratic transformation towards socialism

সিপিবি-বাসদ-এর সংবাদ সম্মেলন আতঙ্কিত পরিস্থিতির জন্য বড় দুই বুর্জোয়া দলের সাম্রাজ্যবাদনির্ভর লুটপাটের রাজনীতিই দায়ি

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ঢাকা শহর তো বটেই জেলাগুলোতেও ভৌতিক-অরাজক-আতঙ্কিত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। সংঘাত-সহিংসতা-সংঘর্ষের আসল কারণ বুর্জোয়া দলগুলির সাম্রাজ্যবাদনির্ভর ক্ষমতাকেন্দ্রিক লুটপাটের রাজনীতি। আতঙ্কিত পরিস্থিতির জন্য বড় দুই বুর্জোয়া দলই দায়ি। আজ ৫ জানুয়ারি মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে (২ কমরেড মণি সিংহ সড়ক, পুরানা পল্টন, ঢাকা) সকাল ১১টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কমরেড সেলিম এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাসদ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, জাহেদুল হক মিলু, রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. ফজলুর রহমান, মোজাম্মেল হক তারা, রাগিব আহসান মুন্না, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক রবিউল আলম খোকন। কমরেড সেলিম আরও বলেন, গণতন্ত্র শুধু ৫ জানুয়ারির বিষয় নয়। গণতন্ত্র শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়ও নয়। বুর্জোয়া দলগুলোর দেউলিয়াপনার কাছে জনগণ এখন জিম্মি। গণতন্ত্র এখন বন্দী বড় দুই বুর্জোয়া দলের হাতে। গণতন্ত্রের নামে যারা এত সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, তারা নিজেরাই গণতন্ত্র মানে না। তাদের হাত থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আগুন দিয়ে আগুন নেভানো যায় না। গণতন্ত্র হরণ করে গণতন্ত্র হয় না। সংবিধান রক্ষা নয়, গদি রক্ষাই সরকারের আসল উদ্দেশ্য। আমাদের প্রশ্ন, জনগণকে কেন টার্গেট করা হয়েছে? জনগণকে কেন অবরুদ্ধ করা হয়েছে? জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেন হরণ করা হচ্ছে? দেশের স্থিতিশীলতার জন্য যদি এসব করা হয়ে থাকে, তাহলে দেশের স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি জামাত-শিবির কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না? সূচনা বক্তব্যে কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, একদিকে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটানো হচ্ছে। মূল্যবোধের ওপর আঘাত হানা হচ্ছে। নিরাপত্তার নাম করে গৃহে অবরুদ্ধ করা, চিকিৎসার নাম করে আটক করা হচ্ছে। এভাবে চালাকি, মিথ্যাচার, কূটকৌশলের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আইন লঙ্ঘন করছে। তিনি আরও বলেন, একদল ক্ষমতায় থাকবেন, আরেকদল ক্ষমতার বাইরে থাকবেন না- এই সংঘর্ষে জনগণের স্বার্থ লঙ্ঘিত হচ্ছে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাহীনতা, কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি, নিপীড়নমূলক বিধিবিধান-আইনকানুন বহাল রেখে গণতন্ত্র সম্ভব নয়। গণতন্ত্র শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপি’র বিষয় নয়। লিখিত বক্তব্যে কমরেড জাফর বলেন, গণতন্ত্র একটি বহুমাত্রিক বিষয়। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও একমাত্র উপাদান নয়। সামগ্রিকতায় গণতন্ত্রকে বিবেচনায় নিতে হবে। গণতন্ত্রের রাজনৈতিক মাত্রিকতার সাথে সমান গুরুত্বপূর্ণ হলো গণতন্ত্রের অর্থনৈতিক মাত্রিকতা। কিন্তু আমাদের বড় দুই বুর্জোয়া দলের যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখে মনে হয়, গণতন্ত্রের একমাত্র সমস্যা হলো শুধু নির্বাচন। তারা গণতন্ত্রকে যে ভোটতন্ত্রে পরিণত করেছিল। জনগণের সেই ভোটের অধিকারও তারা ৫ জানুয়ারি কেড়ে নিয়েছে। কমরেড জাফর আরও বলেন, আমরা সিপিবি-বাসদ দেশের এই অশান্ত, অনিশ্চিত ও সংঘাতপূর্ণ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুসহ টাকার খেলা, পেশিশক্তি, প্রশাসনিক কারসাজি ও সাম্প্রদায়িক প্রচারণা ইত্যাদি থেকে মুক্ত করে সকলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের দাবি করে আসছি। আমরা এই দাবি আদায়ে এবং সেই সাথে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে রক্ষা, প্রসারিত ও গভীরতর করার সংগ্রাম জোরদার করবো। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত এক বছরে সংঘাত-সংঘর্ষ, আতঙ্ক থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। বরং ক্রমান্বয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। উন্নয়নের নামে চলছে লুটপাট, হত্যা, সন্ত্রাস, গুম-খুন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। সরকারের জনবিচ্ছিন্নতা যতই বাড়ছে ততই সরকারের ভেতর এক ধরনের ফ্যাসিবাদী প্রবণতা বাড়ছে। সরকার হয়ে পড়ছে বাহিনী নির্ভর। সরকারের এই গণবিচ্ছিন্নতা ও দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও সংস্থাসমূহ। সংবাদ সম্মেলন থেকে গণতন্ত্র রক্ষার নামে সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া, বিএনপি নেত্রীকে তার কার্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ দিয়ে তালাবদ্ধ করে দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বার্তা প্রেরক চন্দন সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগ, সিপিবি

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..