Revolutionary democratic transformation towards socialism

রাজনৈতিক প্রস্তাব ( ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ঢাকায় অনুষ্ঠিত একাদশ কংগ্রেসে গৃহীত)


ভূমিকা সাম্প্রতিক সময়ে দেশ অনেক ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছে। এই অগ্রগতির প্রধান কারিগর ও নায়ক হলো দেশের কৃষক-ক্ষেতমজুর, গার্মেন্টস শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণ, প্রবাসে কর্মরত মেহনতি মানুষ ও ক্ষুদে-মাঝারি উদ্যোক্তাগণ। দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র ও শাসকগোষ্ঠীর গণবিরোধী কার্যকলাপ সত্ত্বেও এই অগ্রগতি যে সম্ভব হয়েছে, তা এ দেশের মজুর-কিষান ও আপামর জনগণের অপার সৃষ্টিক্ষমতা, সৃজনশীলতা ও দেশপ্রেমের সাক্ষ্য বহন করে। দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা তাদের হাতে এলে, এ দেশ যে অসাধ্য সাধন করতে পারবে-এটি তারই প্রমাণ। কিন্তু এই অগ্রগতি সত্ত্বেও সামগ্রিক বিবেচনায় এ কথা বলতে হয় যে, দেশে আজ বিরাজ করছে এক অব্যাহত রুগ্ণতা ও সংকটের আবর্ত। সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে লুটেরা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পুঁজিবাদী সংশ্লেষণের আরো বিস্তৃতি ঘটে চলেছে। গত ৪ দশক ধরে চলতে থাকা ‘সাম্রাজ্যবাদনির্ভর লুটেরা-ধনবাদের’ একই পথে দেশ আজও পরিচালিত হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, লুটপাটতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতা এখন দেশের সামনে সবচেয়ে বড় বিপদ রূপে বিরাজ করছে। আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে দেশ আবদ্ধ হয়ে আছে এক স্থিতাবস্থায়। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির বিপজ্জনক পশ্চাদ্গমনও ঘটেছে। বস্তুত দেশের আরো দক্ষিণপন্থী অধোগতি ঘটেছে। প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক জঙ্গি অপশক্তি সম্প্রতি কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হলেও এবং কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও দণ্ড কার্যকর হওয়া সত্ত্বেও, এসব অপশক্তি তাদের সামাজিক ভিত্তি তৃণমূলে প্রসারিত করতে শুরু করেছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িকীকরণ ঘটে চলেছে। তা সত্ত্বেও এসবের প্রধান হোতা জামায়াত এবং অনুরূপ অপশক্তিকে এখনও নিষিদ্ধ করা হয়নি। অথচ ভোটাধিকারসহ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে পরিকল্পিতভাবে খর্ব করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী প্রবণতা ও কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘অবাধ বাজার অর্থনীতি’র দর্শন অনুসরণের ফলে রাজনীতিসহ সর্বক্ষেত্রে পণ্যায়ন, বাণিজ্যিকীকরণ, ভোগবাদ, প্রদর্শনবাদ ইত্যাদি আরো গভীরে বিস্তার লাভ করছে। সম্পদ-বৈষম্য ও শ্রেণি-বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ছে। জনজীবনের দৈনন্দিন সমস্যা-সংকটগুলো নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিস্তৃত হচ্ছে। রাষ্ট্র, সমাজ, রাজনীতিতে বিপজ্জনক দুর্বৃত্তায়ন ঘটায় সামাজিক নৈরাজ্যের বিপদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন-হামলা বাড়ছে। পরিবেশ-প্রকৃতির বিরুদ্ধে আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। দেশ আরো শক্তভাবে সাম্রাজ্যবাদের নিগড়ে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারা এবং রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি-জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি থেকে দেশ এখনও অনেক দূরে সরে এসেছে। বরং অনেক ক্ষেত্রে তার বিপরীতমুখী প্রবণতা জোরদার করা হচ্ছে। এসবই হলো লুটেরা-বুর্জোয়া শাসনব্যবস্থার প্রতিক্রিয়াশীলতা ও চরম ব্যর্থতা-দেউলিয়াপনার নিদর্শন। গোটা বিশ্বেও নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার অভিঘাত আমাদের দেশের ওপরেও এসে পড়ছে। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের প্রান্তস্থিত অবস্থানের কারণে আমাদের দেশ ব্যাপকভাবে হয়ে আছে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী দেশ ও শক্তির অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনার অনুগামী ও ক্রীড়নক। দশম পার্টি-কংগ্রেসের পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কার্যত একতরফা ও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ‘নির্বাচনের’ মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সহিংস সন্ত্রাস, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা ইত্যাদি দ্বারা একটি ‘পরিস্থিতি’ সৃষ্টি করে যেনতেন উপায়ে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটানোর যে ষড়যন্ত্র করেছিল, সে রাজনৈতিক ‘জুয়া’ খেলায় তারা ব্যর্থ হয়েছিল। আওয়ামী লীগ এই ষড়যন্ত্রের খেলাকে চতুরতার সঙ্গে মোকাবেলা করে এবং ‘অনেকটা খালি মাঠে গোল দেওয়া’র পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘জিতে আসা’র ব্যবস্থা করেছিল। অন্যান্য আসনে নির্বাচনের নামে পরিচালিত হয়েছিল প্রহসন। এভাবে আওয়ামী লীগ একটি নিয়ম রক্ষার, কিন্তু নৈতিক ও গণতান্ত্রিক বিবেচনায় অগ্রহণযোগ্য, প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়েছিল। তার পর থেকে দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি ক্রমাগত আরো দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে চলেছে। আওয়ামী লীগের জনবিচ্ছিন্নতা অব্যাহত আছে। জনগণের সমর্থনের বদলে, রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তিকে দলীয়ভাবে

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..