Posted: 21 জুন, 2025
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়া ও রাখাইনে করিডোর দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আগামী ২৭ ও ২৮ জুন ২০২৫, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ করবে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ।
আজ ২১ জুন ২০২৫, শনিবার, বিকেল ৪টায় পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে রাখাইনে করিডোর ও লাভজনক চট্টগ্রামের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের লিজ দেওয়ার যে পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তা গণতন্ত্রে উত্তরণের সম্ভাবনায় নানা সংকট তৈরি করছে। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি, দেশের হৃদপিণ্ড। আমদানি ও রপ্তানির ৯২ ভাগ এই বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। ভৌগোলিক কারণে এই বন্দরের সাথে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জড়িত। এই বন্দরের সবচেয়ে বৃহৎ ও লাভজনক টার্মিনাল হলো নিউমুরিং টার্মিনাল। এই বন্দর বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া হবে আত্মঘাতী। এর ফলে বন্দরের মত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদের ওপর বিদেশি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। বিদেশিদের নিয়োগের ফলে দেশিয় কর্মসংস্থান কমবে। শ্রমিকরা বেকার হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান সরকার মিয়ানমারের রাখাইনে কথিত মানবিক করিডোর বা ত্রাণ চ্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই করিডোর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিকভাবে আক্রান্ত হবে। সাম্রাজ্যবাদী ছায়াযুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ। এই অঞ্চলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এছাড়া সরকার মার্কিন স্যাটেলাইট কোম্পানি স্টারলিংককে এদেশে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের অনুমতি দিয়েছে এবং ইতোমধ্যে তা চালু হয়েছে। এই মার্কিন কোম্পানি শুধু নিরীহ ইন্টারনেট সেবাই প্রদান করে না, সেই সাথে দেশে দেশে সামরিক ও রাজনৈতিক নজরদারি চালায়। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে, ফিলিস্তিন-ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা-ইসরাইলের পক্ষে তথ্য প্রযুক্তিগত অস্ত্র হিসাবে কাজ করেছে এই ইন্টারনেট কোম্পানি। তাই এই ইন্টারনেট কোম্পানি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সামরিক শিল্পের মত স্পর্শকাতর খাতে তুরস্ক ও কাতারকে অস্ত্র তৈরির কারখানা নির্মাণের আহ্বান করেছে এই সরকার। এই পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ২৭ ও ২৮ জুন, ২০২৫ ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মসূচির সাথে সংহতি জানিয়ে ২৭, ২৮ জুন দেশের সকল জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।
২৭ জুন : সকাল ৯টায়, ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশ। উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লার বিভিন্ন পয়েন্টে পথসভা ও মিছিল শেষে কুমিল্লায় প্রথম দিনের সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে এবং ফেনীতে রাত্রীযাপন করা হবে।
দ্বিতীয় দিন ২৮ জুন সকালে ফেনী থেকে যাত্রা শুরু করে মিরসরাই, সীতাকুণ্ডে পথসভা ও মিছিল শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে সমাপনী সমাবেশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সূচনা বক্তব্য রাখেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক, গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন নসু। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশ জাসদ-এর স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মোস্তাক হোসেন, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য বেলাল চৌধুরী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ ভূইয়া, বাংলাদেশের সোসালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান, জাতীয় গণফ্রন্টের রজত হুদা, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বায়ক মফিজুর রহমান লাল্টু, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ প্রমুখ।