“লুটেরা দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে রাজনীতি ও দেশকে বাঁচাতে হবে”

Posted: 22 মার্চ, 2024

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, দেশের কৃষক ক্ষেতমজুররা ফসলের লাভজনক দাম না পেলেও পর্যাপ্ত পণ্য উৎপাদন করছেন। শ্রমিকদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন না হলেও তারা কাজ করে চলেছেন। বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিকরা দেশে ফিরে মর্যাদা না পেলেও দেশে টাকা পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন। এর উপরে দাঁড়িয়ে সরকার উন্নয়ন ও অর্থ সম্পদের গল্প শোনায়। আর এই সরকারি তথ্যই বলছে দেশের ২৬ ভাগ পরিবার ধার করে খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছে, অর্থাৎ ৪ কোটি পরিবার ঘোরতর দুরবস্থায়  আছে। এ দায় ক্ষমতাসীনদের নিতে হবে। একইসাথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর পালাক্রমে যারা দেশ শাসন করেছে তারাও এই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।

তিনি বলেন, লুটপাটকারীরা এই আয়ের বিরাট অংশ লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। তাই তো সমাজে বৈষম্য প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের রাজনীতি আজ দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দি। এসব লুটেরা দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে রাজনীতি ও দেশকে বাঁচাতে হবে। এজন্য সচেতন মানুষকে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতিতে সমবেত হয়ে নীতিহীন রাজনীতিকে পরাজিত করতে হবে। এ কাজ করতে যত দেরি হবে দেশের সংকট সমাধানেও তত দেরি হবে। এই সুযোগে বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের উপরে হস্তক্ষেপ করতেই থাকবে। 

তিনি বলেন, যেকোনো বিদেশিদের নাক গলানোর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিয়ে আমাদের দেশের সংকটের সমাধান আমরাই করব।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, উপজেলা নির্বাচনে জামানতের টাকা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে বড়লোকের টাকার খেলায় পরিণত করেছে। তিনি ভোটে দাঁড়ানো ও ভোট দেওয়ার সমঅধিকারের দাবি করে বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ও নির্বাচনে টাকার খেলা প্রশাসনিক কারসাজি বন্ধ করে সবক্ষেত্রে সবার সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আজ ২২ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, সকাল ১১ টায় শহীদ আসাদ-রফি গ্রন্থাগারের শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সিপিবি খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন রুহিন হোসেন প্রিন্স।

উপজেলা সভাপতি গাজী আফজাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএ রশিদ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল হান্নান, উপজেলা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মনিরুজ্জামান, শেখ দিদারুল ইসলাম, মো. জামাল হোসেন প্রমুখ।

রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, দেশে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে। অসৎ রাজনীতিক, অসৎ আমলা, অসৎ ব্যবসায়ীরা মিলিয়ে যে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি তৈরি করেছে এরাই আজ দেশ পরিচালনা করছে। অর্থনীতিতে চরম সংকট চলছে। ব্যাংকগুলোর অবস্থা নাজুক। ডলার সংকট। সরকার দেনায় ডুবে আছে। সাধারণ মানুষের ঋণের বোঝা বাড়ছে। সাধারণ মানুষের পকেটে টাকা নেই। বাজারে পণ্যের অভাব না থাকলেও সাধারণ মানুষ তা কিনতে পারছে না। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি বাজার ব্যবস্থা। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে।

তিনি এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পুরো ব্যবস্থা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ব্যবস্থা বদল ছাড়া সাময়িক টোটকা ওষুধ দিয়ে এসব সমস্যার কোনো সমাধান করা যাবে না। তিনি কৃষকের উৎপাদিত ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করতে পণ্যের উৎপাদন খরচ কমানো, উৎপাদক সমবায় গড়ে তোলার আহ্বান জানান। একইসাথে ন্যায্য মূল্যে ক্রেতার কাছে এসব পণ্য পৌঁছে দিতে ক্রেতা সমবায় গড়ে তুলে, চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য দূর করে পরিকল্পিতভাবে পণ্য সরবরাহের আহ্বান জানান। আমদানিকৃত পণ্যের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বাফার স্টক গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি। 

তিনি বলেন, দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পণ্য সামগ্রীর বাফার স্টক গড়ে তুলে সারাদেশে রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালু ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না ।

তিনি পাটকল বন্ধের জন্য সরকারের নীতিকে দায়ী করে বলেন, পাটকল লোকসানের দায় শ্রমিক কর্মচারীর নয়, এর দায় সরকারের। আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রীয় খাতে পাটকাল চালুর ও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের দাবি জানিয়ে বলেন, বর্তমানে লিজ দেওয়ার নামে পাটকলের জমি ও মেশিনপত্র লুটপাটের আয়োজন চলছে। এর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

তিনি ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে দুর্নীতি, হাটবাজারে ইজারার নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানির তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসন ও সরকারি দলের ছত্রছায়ায় মানুষের ওপরে এসব জুলুম-নির্যাতন চলছে। এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, মার্চ মাস স্বাধীনতার মাস। এই মাসে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন উৎসর্গ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণায় বলা হয়েছিল আমরা মানুষের নাগরিক মর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করব। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর ৭২’র সংবিধানে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে ৪ মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আজ এগুলো উপেক্ষিত। এসবের প্রতিষ্ঠা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা অর্থহীন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মুক্তিযুদ্ধের এই প্রকৃত চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্যই সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যকে সামনে রেখে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

তিনি দেশবাসীকে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতিকে পরিত্যাগ করে নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক দল সিপিবির পতাকা তলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।

উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে একটি মিছিল ফুলতলা বাজারসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।