Revolutionary democratic transformation towards socialism

“দেশটা লুটপাটের ও লুটপাটকারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে”


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, একদিকে সরকার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির গল্প শোনাচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবন অতিষ্ঠ। দেশ থেকে অবাধে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। 

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি খেলাপি ঋণ হয়েছে। সাবেক সেনা প্রধান, পুলিশ প্রধান, সম্প্রতি ভারতে নৃশংসভাবে নিহত হত্যাকাণ্ডের শিকার বাংলাদেশের এমপি’র দুর্বৃত্তায়ন ও লুটপাটের খবরের মধ্য দিয়ে বর্তমানের লুটপাটের সামান্য চেহারাই উঠে এসেছে। এসব তথ্যই বলে দেয় দেশটা লুটপাটের ও লুটপাটকারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।

এ অবস্থা থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে চলমান কর্তৃত্ববাদী এক ব্যক্তির শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। পুরো ব্যবস্থা বদল করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর স্বাধীন দেশে পালাক্রমে যারা ক্ষমতায় ছিল এবং আছে তারা এই কাজে ব্যর্থ হয়েছে। তাই একমাত্র নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক শক্তি পারে এই ব্যবস্থা বদলে সংগ্রাম অগ্রসর করতে। এই সংগ্রামের সামনে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেশন ব্যবস্থা চালু, পাচারের-খেলাপি ঋণের টাকা উদ্ধার, লুটপাট বন্ধ, মুক্তিযুদ্ধের অর্থনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতে গণমানুষের বাজেট প্রণয়ন, কর্তৃত্ববাদী শাসন ও সাম্রাজ্যবাদ আধিপত্যবাদী শক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বানে সিপিবি আহূত দেশব্যাপী বিক্ষোভ সপ্তাহের প্রথম দিন আজ ২৪ মে ২০২৪ বিকাল ৫টায় রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য পরেশ কর, সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা ও শ্রমিক নেতা আব্দুল কুদ্দুস। সমাবেশ পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রমিকনেতা কাজী রুহুল আমিন।

সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স আরো বলেন, নির্বাচন আজ নির্বাসনে চলে গেছে। লুটেরা দুর্বৃত্তরা আজ ক্ষমতাশ্রয়ী রাজনীতির

চালকের আসনে বসে আছে। তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সারাদেশে লোভ আর ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে যার যার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একইসাথে ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও  ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে সামনে রেখে গণআন্দোলন-গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ মেহনতি ও মধ্যবিত্তরা কাজের সময় বাদ দিয়ে, সম্মান হারিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাঝেমধ্যে ট্রাকের সাপ্লাই দেওয়া কম দামের পণ্য কেনে। এ অবস্থা পরিবর্তন করে সাধারণ মানুষের খাদ্যপণ্য নিশ্চিত করতে সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালু করতে হবে। পর্যায়ক্রমে এসব জায়গায় প্রোটিন সমৃদ্ধপণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় আরও পণ্য যুক্ত করতে হবে।

তিনি আসন্ন বাজেটে এসব খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধের অর্থনৈতিক ধারায় গণমানুষের বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান। সরকার জানিয়েছে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় নাকি বেড়ে গেছে। তাহলে চারজনের পরিবারের মাসিক আয় লাখ টাকার কম হওয়ার কথা না। তিনি প্রশ্ন করেন, দেশে কটি পরিবার মাসে লাখ টাকার উপরে আয় করে? বাকি টাকা যায় কোথায়?

সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের সাংবিধানিক অধিকারকে নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বলেন, লুটপাট বন্ধ, আর সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে পারলে দেশের বর্তমান অর্থনীতিতে সব মানুষকে এসব অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব। বক্তারা উৎপাদিত ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করতে উৎপাদক সমবায় ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলা এবং শ্রমিকের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের দাবি জানান। 

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ ডা. ফজলুর রহমান, সদস্য কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, অ্যাড. মন্টু ঘোষ, জলি তালুকদার, মানবেন্দ্র দেব, সাদেকুর রহমান শামীম, জাহিদ হোসেন প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পার্টি কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ সপ্তাহের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..